জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, তাঁর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকবান্ধব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই ঘোষণা দেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে। তবে গত পাঁচ দশকে এই মূল্যবোধগুলো বারবার হুমকির মুখে পড়েছে এবং দেশের তরুণ সমাজকে বারবার এর পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখতে হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি স্মরণ করেন, এই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের নেতৃত্বে স্বৈরাচার পরাজিত হয়েছিল। এরপরই তাঁর ওপর একটি বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনের দায়িত্ব আসে। ইউনূস বলেন, “ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। আমরা সহজ পথ বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই পথের দিকে এগিয়েছি।”
তাঁর সরকার ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ করে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, যেখানে স্বৈরাচারের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুর্নীতি দমন এবং নারী অধিকারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১১টি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনগুলো বিভিন্ন পক্ষ থেকে জনমত গ্রহণ করে বিস্তারিত সংস্কারের সুপারিশ করেছে।
এই সংস্কারগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে, যা ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করছে। সম্প্রতি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে এসে ‘জুলাই ঘোষণা’র মাধ্যমে এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এর ফলে, আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না বলে তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন।

