আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান সম্প্রতি তার স্ত্রী সাবিকুন নাহার কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। স্ত্রীর আবেগপ্রসূত পোস্টকে ‘অপার ভালোবাসার নিদর্শন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কটূক্তি না করার জন্য অনুসারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্ত্রীর প্রতি ক্ষমা ও কৃতজ্ঞতা
আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে তিনি তাকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন, এমনকি অতীতের কষ্টের স্মৃতি মনে রেখেও। তিনি তার স্ত্রীর প্রতি গুমের সাত দিন তার অক্লান্ত চেষ্টা ও অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, সেই সময় সাবিকুন নাহারের ভূমিকা ছিল ‘পাহাড়ের মতো লড়াই’ করার মতো, যা অন্য কোনো নারীর পক্ষে সম্ভব হতো না। তিনি স্বীকার করেছেন, গত চার বছরের সংসার জীবনে বহুবার আহত হওয়া, ক্ষত-বিক্ষত হওয়া এবং বিচ্ছেদের চিন্তা এলেও গুমের সময়ের অবদান সব তুচ্ছ করে দিয়েছে।
পেইজ হ্যাক হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে তার ব্যক্তিগত ফোনটি চুরি বা হারিয়ে গেছে, এবং সিম নাম্বারও বন্ধ। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে অফিসিয়াল পেইজে পোস্ট দেওয়ার জন্য হারানো ফোন ফিরে পাওয়ার প্রয়োজন হয় না, এডমিন প্যানেলই যথেষ্ট। তিনি অনুযোগ করেন যে বিদ্বেষ ও ঘৃণা কীভাবে মানুষকে ভুল ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারে উৎসাহিত করে।
প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও কার্যক্রমের ব্যাখ্যা
আদনান তাদের দ্বীনি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ওঠা অভিযোগগুলোর বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন:
আর্থিক স্বচ্ছতা: তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের টাকায় গড়া নয়, বরং আল্লাহর দেওয়া রিজিকে গড়া। মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান শুধুমাত্র আহলে গাযযাসহ বিভিন্ন দীনি প্রগ্রাম ও ইভেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সেগুলোর হিসাব কাগজে-কলমে সংরক্ষিত আছে। কিছু দেনা থাকলেও দ্রুত পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফ্রি মিক্সিং-এর অভিযোগ: প্রতিষ্ঠানে ফ্রি মিক্সিং-এর কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন। সাপ্তাহিক তালিমের পর বিশেষ প্রয়োজনে কেউ অভিভাবকসহ বা মাহরামসহ অফিসের কারো সাথে দেখা করলে তাকে অস্বাভাবিক মনে করা ঠিক নয়। তিনি এই ছোট্ট দ্বীনি মারকাজ নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় গভীর কষ্ট পেয়েছেন।
অনলাইন মাদরাসা: অনলাইন ক্লাস জুম-এর মাধ্যমে হয় এবং ছেলেদের ক্লাস শেষে মেয়েরা পড়া দেয়। মশক বা অনুশীলনের জন্য ফিমেল উস্তাযা রাখা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, সম্পূর্ণ মেয়েদের জন্য অনলাইন মাদরাসাটি আলাদা করার চেষ্টা চলছে। তিনি স্ত্রীকে ঘরের কথা বাইরে প্রকাশ না করে ধৈর্য ধরার এবং ইসলাহের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অতীত জীবন এবং বিবাহের দর্শন
তিনি তার অন্ধকার অতীত স্বীকার করেছেন। ১৫ বছর আগে তিনি একজন ক্রিকেটার, গিটারিস্ট, ভোকাল এবং স্পোর্টসম্যান ছিলেন, যা তিনি এখন প্রকাশ করলেন। পরে তাবলীগের মাধ্যমে তিনি দ্বীনে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, তার জীবনে পূর্বেও একজন নারীর সংশ্লিষ্টতা ছিল, যা স্বাভাবিক—কিন্তু এখন তাদের রাস্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
স্ত্রীর উদ্দেশ্যে ত্বহা বলেছেন যে তিনি শুধুমাত্র বিয়েতে বিশ্বাসী এবং কোনো ‘লাভ ম্যারেজ’ করেননি। দ্বীনে ফিরে তিনি দুইজন নারীর দায়িত্ব নিয়েছেন এবং উভয় বিয়েই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল। তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এবং স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করেননি বা করতে চাননি। তিনি অনুমান, কুধারণা ও কান-পড়ার ভিত্তিতে হালাল সম্পর্ককে ‘হারাম’ বা ‘ব্যাভিচারের’ মতো শব্দে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান স্বীকার করেছেন যে এই অভ্যন্তরীণ বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করায় দ্বীনের দুশমন, শত্রু ও মুনাফিকদেরই লাভ হয়েছে। তিনি নিজেকে গুনাহগার দাবি করে সকলের কাছে ক্ষমা ও ইসলাহের দুআ ভিক্ষা চেয়েছেন। সবশেষে তিনি স্ত্রীর প্রতি তার অসম্ভব ভালোবাসা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “কোনো কিছুর বিনিময়েও আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আর এতকিছুর পরেও আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না।” তিনি চান দুনিয়া ও আখিরাতে তিনি তার যাওজ (স্বামী) হয়েই থাকতে। তার সব আহাল, পরিবার ও সম্পর্ককে তিনি মুহাব্বাত করেন এবং স্ত্রীর বিশ্বাস, আনুগত্য ও গাইরতের সাথে থাকাটা তার কাছে ৪ আহলিয়া বা ৭২ হুর-এর চেয়েও বেশি মূল্যবান। তিনি মহান আল্লাহর কাছে শাহাদাতের মওত কামনা করেছেন।

