একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শক্তিশালী সেনাবাহিনী অপরিহার্য। সেনাবাহিনী শুধু যুদ্ধের বাহিনী নয়, বরং তাঁরা দেশের স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ইতিহাস সাক্ষী, কোনো রাষ্ট্র তখনই টিকে থাকে যখন তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দৃঢ় ও সুশৃঙ্খল থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনী স্বাধীনতা ও সার্বভৌম মর্যাদার প্রধান রক্ষক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।
সেনাবাহিনী স্বাধীনতার প্রতীক:
বাংলাদেশের জন্মলগ্নে সেনাবাহিনী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছিলো। ১৯৭১ সালে মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা রণাঙ্গনে লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের আত্মত্যাগ আজও জাতির কাছে স্বাধীনতার গৌরবময় প্রতীক। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী সেই অর্জনকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করছে।
সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতিক:
একটি দেশের সার্বভৌমত্ব মানে হলো অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার। এই অধিকারকে রক্ষা করে সেনাবাহিনী। সীমান্তে শত্রুর আগ্রাসন প্রতিহত করা, জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং আভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেখিয়ে দেয় যে দেশের সার্বভৌমত্ব অটুট রয়েছে।
জাতীয় স্থিতিশীলতা ও মানবিক দায়িত্ব:
সেনাবাহিনী শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, দুর্যোগকালীন সময়েও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প বা মহামারির মতো পরিস্থিতিতে সেনারা মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের নাম বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করেছে। এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌম মর্যাদা আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
সেনাবাহিনী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক:
সেনাবাহিনী একটি নিরপেক্ষ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান। তাঁরা রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে সেনাবাহিনী কেবল প্রতিরক্ষাই নয়, জাতীয় ঐক্য ও সংহতিরও প্রতীক হয়ে ওঠে।
সবশেষ সেনাবাহিনী একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার জীবন্ত প্রতীক। তাঁদের উপস্থিতি জাতিকে আত্মবিশ্বাসী করে এবং দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সুদৃঢ় রাখে। তাই বলা যায়, সেনাবাহিনী শুধু প্রতিরক্ষার বাহিনী নয়, তারা স্বাধীনতার রক্ষক, সার্বভৌমত্বের অভিভাবক এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
_লেখক…
এম মহাসিন মিয়া, সাংবাদিক ও লেখক।

