স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ। যেখানে দিনরাত ২৪ঘন্টা নানা জাত ও রঙ্গের ফুলের মিশ্রিত বিশুদ্ধ বাতাস মিলে। মিলে নানা জাত ও রঙ্গের ফুলের অমলিন সৌরভ। শীতের স্নিগ্ধ সকালে শিশির বিন্দুতে ভিজে লাল টকটকে হয়ে উঠেছে ডালিয়া। ফুল ডালিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে রাতভর শিশির স্নানে রঙ্গ ধরেছে চন্দ্রমল্লিকাতেও।
শুধু তাই নয়, সকলকে তাক লাগিয়ে হিমেল হাওয়ায় সতেজ হয়ে উঠেছে গাঁদা ফুলগুলো। ফুলে ফুলে উড়ে উড়ে নাচন করছে নানা রঙের প্রজাপ্রতিগুলো। হয়তো তাঁরা ফুলকে নিয়ে গাইছে কোনকিছু। তারই সাথে তাল মিলিয়ে নানা জাত ও রঙের ফুলের সমারোহে সাজানো গোছানো স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজের চারপাশে যেন মৌ মৌ করছে রঙিন ফুলের সৌরভ।
ফুলের পরশ ও সৌরভে এমনই মোহনীয় হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার “স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ”। জেলা সদর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার গেলেই মহালছড়ি উপজেলার মুড়াপাড়ায় মূল সড়কের পাশেই এমন নান্দনিক ফুল বাগিচা সাজিয়েছেন মহালছড়ি উপজেলার স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা মো. খালেদ মাসুদ সাগর। যার নাম দিয়েছেন, “স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ”। আইন বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকেই তাঁর এমন উদ্যোগ। প্রাথমিকভাবে ২ একর জমি ইজারা নিয়ে ২০২৪ সালে শুরু করেন ফুলের চাষ। শুরুতে দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রজাতির ফুল নিয়ে শুরু করলেও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে পরিধি। এখন ২ শতাধিক ফুলের ৪০০ প্রজাতির ফুলের চাষ হচ্ছে তাঁর বাগানে। যার সুভাস বদলে দিয়েছে আশপাশের দৃশ্যপট। যা এখন বানিজ্যিক চাষাবাদে রুপান্তর হচ্ছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এগ্রো ইকো ট্যুরিজমের দিকে যাচ্ছে এ উদ্যোগ।
বছর কয়েক আগেও যে জায়গায় ইটভাটার পোড়া মাটির ছাপে নোংরা অ-পরিছন্ন একটি স্তুপে পরিণত হয়েছিলো সে জায়গা এখন নানা রঙের ফুলের সৌরভে সুবাসিত “স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ”। যা এখানকার স্থানীয়দের কাছে মহালছড়ি ফুল বাগিচা নামেও বেশ পরিচিত। খাগড়াছড়ি জেলা শহর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ ফুল বাগিচার নানা রঙের ফুলের পরশ নিতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। এছাড়া নান্দনিক এ ফুল বাগিচায় ভীড় জমান বিভিন্ন জায়গা থেকে খাগড়াছড়িতে ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও। নানা রঙের ফুল থেকে নিজেদের পছন্দ ফুলের নিচ্ছেন সুভাস, তুলছেন ছবিও।এছাড়াও এ ফুল বাগিচার ভেতরে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক একটি কফি কর্নার-কাম-রেষ্টুরেন্ট। রয়েছে ছবি তোলার জন্য একাধিক নান্দনিক বুথ।
ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় অমলিন ভাষায় লেখা আছে কঠিন কিছু শর্ত। জনপ্রতি মাত্র ৩০টাকা মূল্যের টিকেটের বিনিময়ে ভেতরে প্রবেশ করা যাবে। স্বপ্নের এই ফুল বাগিচায় প্রবেশ করে নানা রঙের ফুলের পরশ নেয়া যাবে, সুবাসিত হওয়া যাবে, ছবি তোলা যাবে, ফুলেদের সাথে কথোপকথন করা যাবে, কিন্তু ফুল ছেঁড়া যাবে না। এমনকি শর্ত ভঙ্গ করলে অর্থ জরিমানার কথাও উল্লেখ করা আছে সেখানে। এরকম নানা শর্ত জেনে, মেনে শুনেও ছুটে আসে অনেকেই। তবুও ফুলের সৌরভে মুখরিত হয় কিছুক্ষণ।
পাশ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলা থেকে ঘুরতে আসা মো. আরিফুল ইসলাম তাঁর অনুভূতি শেয়ার করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজের ছবি দেখে মুগ্ধ হই। এখানে এসে নানা রঙ ও জাতের ফুলগুলো দেখে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নানা রঙের ফুলের সৌরভে মুখরিত হয়েছে এখানকার চারপাশ।জেলা সদর থেকে আসা মাহফুজুর হোসেন বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে এবারই প্রথম আসলাম মহালছড়ি স্বপ্নবিলাসে। ফুলে ফুলে সেজেছে পুরো স্বপ্নবিলাস। খুবই চমৎকার পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম আমরা।
স্বত্বাধিকারী মো. খালেদ মাসুদ সাগর বলেন, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরি ও আইন পেশায় মন টানেনি। তাই কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করি। খাগড়াছড়ি বিশেষ করে মহালছড়ির আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অতন্ত্য উপযোগী বলে ফুল চাষ দিয়েই শুরু করি। যা এখন বানিজ্যিক চাষাবাদে রুপান্তরিত করছি।খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ির আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অতন্ত্য উপযোগী। স্বপ্নবিলাসের স্বত্বাধিকারী মো. খালেদ মাসুদ সাগর যেভাবে নানা রঙ ও জাতের ফুল দিয়ে তাঁর স্বপ্নবিলাস সাজিয়েছেন তা খুবই চমৎকার ও প্রশংসনীয়।